Friday 19 February 2021

কিভাবে আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডকে করপোরেট, প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসের সাথে যুক্ত করবেন ?

 


প্রথমেই জানতে হবে পার্সোনাল ব্র্যান্ড কি
মার্কেটিং জগতে পার্সোনাল ব্র্যান্ডের বিকল্প নেই এটা বলতে হয়, এটা তার নিজস্ব একটা জায়গা অরে নিয়েছে। পার্সোনাল ব্র্যান্ড যে শুধু মাত্র কার্যকর তাই নয় এটা যদি কৌশলে পরিচালনা করা হয় তাহলে এটা একটা আলাদা মাত্রা যোগ করে। প্রচুর উদাহারন আছে শক্তিশালি পার্সোনাল ব্র্যান্ডের বিভিন্ন সেক্টরে যারা মার্কেটে অনেক জনপ্রিয় এবং নিজেদের করপোরেট, প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস ব্র্যান্ডকে সফলতার দিকে নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। আর এখানে ছোট বড় ব্যবসা মূল কথা না, এটা সব ধরনের বিজনেসের ক্ষেত্রেই সম্ভব।
তাহলে পার্সোনাল ব্র্যান্ড অথবা পার্সোনাল ব্রান্ডিং কি? পার্সোনাল ব্রান্ডিং হচ্ছে একজনের কৌশলগত কিছু এক্টিভিটি যা সে নিজেই করে থাকে, যেমন আপনার একটা ওয়েব ডিজাইন কোম্পানি আছে, আর আপনি নিজেই ওয়েব ডিজাইনার, তাহলে আপনি নিজের ব্র্যান্ড যখন করবেন তখন একই সাথে আপনার কোম্পানির ব্র্যান্ডও হয়ে যাবে।
তবে এটা রাতারাতি সম্ভব নয়, একটা দুইটা ইনফোগ্রাফিক দিলেন, ভিডিও দিলেন ব্র্যান্ড হয়ে গেলো ব্যাপারটা এমন না, আপনাকে এটা প্রতিনিয়ত করে যেতে হবে, আপনার স্কিল মানুষের আপনার সঠিক কাস্টোমারের কাছে তুলে ধরতে হবে তাহলেই ধীরে ধীরে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি পরচিতি পাওয়া শুরু করেছেন আর তার সাথে আপনার কোম্পানিও।
পার্সোনাল ব্রান্ডিং জনপ্রিয়তা পায় যখন সামনে ফেসবুক, ইউটিউব অথবা লিঙ্কডিন সামনে চলে আসে। সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রত্যেকেই সম্ভাব্য ব্র্যান্ড যদি তারা সঠিক কৌশল অনুযায়ী কাজ করতে পারে, সফলতার চাবি তাদের কাছেই আছে যারা তাদের প্রোডাক্টের অথবা সার্ভিসের কথা তাদের গল্পের মধ্যে তুলে ধরে। প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস এর সফলতার গল্প, কিভাবে শুরু হলো, কি বাঁধা ছিলো, সেগুলি কিভাবে সে অতিক্রম করলো ইত্যাদি।
আরেকটা ব্যাপার এখানে থাকতে পারে সেটা হচ্ছে ধরেন আপনি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার, একটা কোম্পানিও আছে আপনাদের, এখন আপনি আপনার কোম্পানিকে পার্সোনাল ব্র্যান্ডের মাধ্যমে কানেক্ট করতে পারেন, আপনি ব্যক্তিগত ভাবে আপনার অর্জনগুলা তুলে ধরেন, সবাইকে জানান, আপনার স্কিল প্রকাশ করেন, সেটা টিউটোরিয়াল
হতে পারে, টিপস হতে পারে, তাহলে আপনার ক্রেতা যখন আপনাকে চিনবে, জানবে যে আপনি দক্ষ, এরপরই জানবে আপনার একটা কোম্পানিও আছে তারা আপনার কোম্পানির সাথেও যুক্ত হবে।
পার্সোনাল ব্রান্ডিং এর মূল কাজগুলা কি
১। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করুন- এই যে শব্দটা "বিশ্বাসযোগ্যতা" অর্জন করুন এটা যে আমি ক্তু লেখায় ব্যবহার করেছি তার হিসাব নেই,আর এটা আমি ইচ্ছা করেই করে থাকি, কারন একটা ব্যবসায় বিশ্বাসযোগ্যতা ছাড়া আপনি বেশিদুর যেতে পারবেন না। পার্সোনাল ব্রান্ডিং এও আপনাকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যা বলছেন সেগুলা ঠিক আছে কিনা, আসলেই করবেন কিনা ইত্যাদি আগে ঠিক করে এরপর কন্টেন্ট রেডি করেন। আপনি যা নন, আপনি যা জানেন না সেগুলি প্রকাশ করা উচিৎ হবে না কোনভাবেই।
২। আপনার দক্ষতার যায়গাগুলি তুলে ধরেন- করপোরেট ব্র্যান্ড হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমান করা খুব সহজ কাজ না যদি আবার সেটা কোন পার্সোনাল ব্র্যান্ডের সাথে কানেক্ট না হয়ে গড়ে উঠে। অন্যদিকে মানুষ সব সময় মানুষের কাছ থেকে উপদেশ অথবা পরামর্শ নিতে চায়, একটা কোম্পানির নামের সাথে কথা না বলে তারা একজন মানুষের নামের সাথে কথা বলতে বেশি পছন্দ করে, সেটা আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে বুঝি, আমার বিজনেস পেজে যতনা ম্যাসেজ আসে সাজেশনের জন্য তার থেকে কয়েকগুন ম্যাসেজ, কল বেশি আসে আমার পার্সোনাল ইনবক্সে।
৩। আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট হতে হবে- যেখানে কর্পোরেট ব্র্যান্ড মানুষের মধ্যে অনেক ভালো কিছুর আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে অথবা কিছু প্রমিস করে থাকে, পার্সোনাল ব্র্যান্ড কাস্টোমারর সাথে অনেক দ্রুত কানেক্ট হয়ে তাদের সহযোগিতা করতে পারে। এখানে অন্যদের সাথে আপনার এঙ্গেজমেন্টও ডেভেলোপ হয়। যেমন অংশীদারদের সাথে,পরামর্শদাতাদের সাথে ইত্যাদি অনেকের সাথে।
৪। কর্পোরেট ব্র্যান্ডকে সাপোর্ট দেন- একটা পার্সোনাল ব্র্যান্ড একটা কর্পোরেট ব্র্যান্ডকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে কারন এখানে অনেক বেশি মানুষের ছোঁয়া থাকে, কারন এটা কর্পোরেট ব্র্যান্ডের পিছে ভয়েস হয়ে উঠে যখন এটি কৌশলগত ভাবে ব্যাবহার করা হয় সফলতা অর্জনের জন্য।এটি কর্পোরেট ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্রতার উপরও জোর দেয়। একটা কর্পোরেট ব্র্যান্ড থেকে আরেকটা কর্পোরেট ব্র্যান্ডকে আলাদা করা কঠিন কারন অনেক কর্পোরেট ব্র্যান্ড একই রকম স্ট্রেটেজি ফলো করে থাকে বিশেষ করে প্রফেশনাল সার্ভিস এবং ফিনান্সিয়াল সেক্টরে। অন্যদিকে যে ব্রান্ড পার্সোনাল ব্র্যান্ডের মাধ্যমে গড়ে উঠে সব ধরনের ব্র্যান্ড গড়ে তোলার উপাদান দিয়ে যেমন brand positioning, purpose, vision, personality, mission, values, story and archetypes সেখানে খুব সহজেই দুইটা করপোরেট ব্র্যান্ডে আলাদা করা যায়।
পার্সোনাল ব্র্যান্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা
৩টা সুবিধা
১। নমনীয়তা- পার্সোনাল ব্র্যান্ড একটা বিজনেস কে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নমনীয়তা দিতে পারে। আপনি যে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসই সেল করেন না কেন আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ড একই রকম থাকবে, বিজনেস অফার পরিবর্তন করতে অথবা অন্য কোন প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস নিয়ে কাজ করলেও এখানে কোন সমস্যা হচ্ছে না।
২। বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি- আবার দেখেন বিশ্বাসযোগ্যতা চলে আসছে। এটা বারবার আসবেই কারন এটাই সব থেকে বড় একটা উপাদান একটা বিজনেস রেলেশনকে উন্নত এবং ডেভেলপ করতে, কারন বিশ্বাস ছাড়া কেউ আপনার কাছ থেকে কিছু কিনবে না। পারসোনাল ব্র্যান্ডের সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত উপস্থিতিও আপনার কাস্টমারকে বুঝাবে আপনার বিজনেসের অস্তিত্ব সম্পর্কে।
৩- বিস্তৃত অ্যাপ্লিকেশন- কর্পোরেট ব্রান্ডে আপনাকে অনেক বেশি কৌশল অবলম্বন করতে হয় যা আপনাকে একটা গন্ডির মধ্যে ফেলে দিবে। তবে পার্সোনাল ব্রান্ডে আপনি ইচ্ছা করলেই আপনার গন্ডির বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেন যদি না এটা একদম উলটাপালটা না হয়ে যায়।
২টা অসুবিধা
একজনকে কেন্দ্র করে অব কিছু ঘুরে বেড়ায়- আপনি যখন একজন ব্যক্তি হিসেবে সফল এটা আপনার পার্সোনাল ব্রান্ডকে শক্তিশালি করে। কিতু যখন আপনি কোন ভুল করে ফেলেন, আপনি যখন ফেইল করে যান সেটা তখন আপনার ব্রান্ডেও প্রভাব ফেলে সাথে সাথে আপনার বিজনেসে। আপনি অসুস্থ হয়ে গেলে সেটাও একটা প্রভাব ফেলবে, আপনি অন্য একজনকে আপনার যায়গায় রিপ্লেস করতে পারবেন না কারন সবাই আপনাকেই চিনে প্রথম থেকে, আপনার উপরই সবার বিশ্বাস।
২। পার্সোনাল ব্রান্ডে বিজনেস সেল করা কঠিন- আপনি হয়তো এখন আপনার বিজনেস সেল করার চিন্তা করছেন না তবে প্রয়োজন তো হতেই পারে, এখন আপনি যদি পার্সোনাল ব্র্যান্ড হিসেবে আপনার বিজনেস বিল্ড আপ করে থাকেন তাহলে আপনি প্রধান সম্পদ এই কোম্পানির, তাই আপনি যদি কোম্পানি বিক্রি করেন তাহলে কেউ সেটা নিতে চাইবে না কারন তারা জানে কোম্পানির কাস্টোমারা আপনাকে খুঁজবে।
কিভাবে পারসোনাল এবং কর্পোরেট ব্র্যান্ড এলাইন করবেন
১। একটা পার্সোনাল ব্র্যান্ডের মূল ফোকাস থাকে একটা কর্পোরেট ব্র্যান্ডকে সাপোর্ট করা যেন আপনি আপনার লক্ষে ভালোমতন পৌঁছাতে পারেন।
আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডকে কর্পোরেট ব্র্যান্ডের সাথে কানেক্ট করতে না পারলে আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ড কখনোই গুরুত্ব পাবে না। কিছু টিপস দেয়া হচ্ছে যার মাধ্যমে আপনি পারসোনাল ব্র্যান্ড এবং কর্পোরেট ব্র্যান্ড এলাইন করতে পারবেন।
২ । পার্সোনাল ব্র্যান্ডকে কর্পোরেট ব্র্যান্ডের সাপোর্ট হিসেবে দেখেন আপনি যখন আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ড সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন তখন অবশ্যই চিন্তা করতে হবে এটা করলে আপনার কর্পোরেট ব্র্যান্ডের কি লাভ অথবা ক্ষতি। এটা যখন করবেন তখন অটোম্যাটিক ভাবে পার্সোনাল ব্র্যান্ড এবং কর্পোরেট ব্র্যান্ডের মধ্যে একটা এলাইন অথবা কানেকশন তৈরি হবে।
পারসোনাল ব্র্যান্ডকে "প্রচারক" হিসেবে ব্যবহার করুন- পারসোনাল ব্র্যান্ডকে নেটওয়ার্ক এবং কর্পোরেট ব্র্যান্ডকে এন্টিটি অথবা বস্তু হিসেবে চিন্তা করেন। পার্সোনাল ব্র্যান্ড হচ্ছে কানেকশন তৈরি করা এবং আপনার কর্পোরেট ব্র্যান্ডকে শক্তিশালী করা যেভাবে আপনার ব্র্যান্ড কল্পনা করছে।
৩। কর্পোরেট ব্র্যান্ডকে মার্কেটিং স্ট্রেটেজি হিসেবে কাজে লাগিয়ে নতুন লিড কালেক্ট করুন, পার্সোনাল ব্র্যান্ড বিসৃত এক্সপোজার পছন্দ করে এবং সাধারনত এটাকে গ্রাহক নিরাপদ হিসেবে গ্রহন করেন। তাই পারসোনার ব্র্যান্ডের মাধ্যমে বড় এমাউন্টের অডিয়েন্সকে প্রথমে ফানেলে নিয়ে এসে এরপর তাদেরকে আপনার কর্পোরেট ব্র্যান্ডের সাথে পরিচিত করান অথবা প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস বিক্রি করেন।
পার্সোনাল ব্রান্ডিং অবশ্যই একটা অত্যাবশ্যক ট্রেটেজি হতে হবে প্রতিটা বিজনেসে, আরও শক্তিশালী আরও ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডগুলি সামনে এলে নিজেকে আলাদা করা চ্যালেঞ্জ হতে পারে তবে প্রধান রিস্ক টা হচ্ছে পারসোনার এবং করপোরেট ব্র্যান্ডের অর্ডারের মধ্যে, যদি কোন ব্র্যান্ডের কতটুকু সীমানা এটা নির্ধারণ করা না যায় তাহলে আপনি আপনার কর্পোরেট ব্র্যান্ড রিস্কের মধ্যে পড়ে যাবে, যেটা আপনার ব্যবসাতে প্রভাব ফেলবে।
আপনি যদি সব কিছু ঠিক মত করতে পারেন এবং আপনি যদি দুইটা ব্রান্ডে একই রকম স্ট্রেটেজি ফলো করেন তাহলে অবশ্যই পার্সোনাল ব্র্যান্ড আপনাকে সহযোগিতা করবে আপনার কর্পোরেট ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে। পার্সোনাল ব্র্যান্ড এর সাথে কর্পোরেট ব্র্যান্ড এলাইন করতে চাইলে পার্সোনাল ব্র্যান্ডকে কর্পোরেট ব্র্যান্ডের সাপোর্ট হিসেবে দেখতে হবে, প্রতিযোগী হিসেবে না। পার্সোনাল ব্র্যান্ডকে "প্রচারক" এবং সেলস ফানেল হিসেবে ব্যবহার করুন এবং প্রতিনিয়ত সজাগ থাকতে হবে পার্সোনাল ব্র্যান্ড যেন কোনভাবেই মাত্রারিক্তভাবেউপরে চলে না যায় তাহলে কর্পোরেট ব্র্যান্ড তার জায়গা হারাবে।

No comments:

Post a Comment