Monday 10 May 2021

রাগান্বিত কাস্টমারকে সামলানো

 কাস্টমাররা বিভিন্ন কারণে রাগান্বিত হয় – কখনো ভালো কারণে, কখনো কারণ ছাড়াই। আপনি যে ধরণের পণ্য বা সার্ভিসই বিক্রি করেন না কেন – অনলাইনে বা অফলাইনে – আপনাকে মাঝেমধ্যে রাগান্বিত কাস্টমারের সামনে পড়তে হবেই। আপনি এসময় তাদের সাথে কি রকম ব্যবহার করবেন, তাঁর উপর নির্ভর করবে তারা ভবিষ্যতে আপনার কাছ হতে পণ্য কিনবে কিনা।

চলুন দেখে নেয়া যাক রাগান্বিত কাস্টমারকে সামলানোর কয়েকটি টিপসঃ
১) শান্ত থাকুন
একজন কাস্টমার রাগান্বিত ইমেইল পাঠালে অথবা ফোনে আপনার সাথে চেঁচামেচি করলে সেটি ব্যক্তিগত ভাবে না নেয়া অনেক কঠিন। এসময় আপনি ভাবতে পারেন, এত কঠোর পরিশ্রম করেও কাস্টমারের ভুল অভিযোগ শোনা লাগছে! আস্তে আস্তে অজান্তেই আপনার রাগ প্রকাশ পাওয়া শুরু হতে পারে।
এর পরিবর্তে একটা গভীর শ্বাস নিন এবং কাস্টমার কি বলতে চাচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাস্টমার দেখবেন আপনার পণ্য অথবা সার্ভিস নিয়ে কোন সমস্যাই ভুগছে। আর আপনার উপরে তারা তাদের হতাশাটা প্রকাশ করছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে আমরা সবাই মানুষ। আমরা সবসময় সঠিক ব্যবহার করতে পারি না। তাই তাদের রাগটা গায়ে না লাগানোর চেষ্টা করেন।
তবে কোন কাস্টমার যদি অত্যন্ত রাগান্বিত হয় এবং আপনার সাথে বাজে ব্যবহার করা শুরু করে, তাহলে আপনার সেটি সহ্য করার দরকার নেই।
উদাহরণ
ধরুন, একজন কাস্টমার আপনার সাপোর্ট টিমকে ফোন দিয়ে ডেলিভারির সময় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছে। বোঝাই যাচ্ছে সে অনেক উত্তেজিত এবং আপনার প্রতিনিধি ফোন ধরার সাথে সাথে সে ম্যানাজারকে খুঁজতে শুরু করেছে।
এসময় আপনার প্রতিনিধিকে শান্ত থাকতে হবে এবং তিনটি “কি” এর উত্তর জানার চেষ্টা করতে হবেঃ “সমস্যাটি কি?”, “কাস্টমার কি চান?” এবং “আপনার হাতে কি অপশন আছে”। আপনার প্রতিনিধি শান্ত থেকে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে পারলে কাস্টমারের রাগ কমানো সহজ হবে।
২) মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস গড়ে তুলুন
কাস্টমারদের কথার পেছনের রাগটায় মনোযোগ না দিয়ে তাদের কথায় মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করুন।
মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনলে তারা কেন রাগান্বিত এবং সমস্যাটি কিভাবে সমাধান করা যায় তা বোঝা সহজ হবে। তাদেরকে শুধুমাত্র শান্ত করার চেষ্টা করেন না। তাদের কথায় মনোযোগ দিলে আপনি তাদের সমস্যা সমাধান করতে পারবেন এবং দ্রুত তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন।
উদাহরণ
ধরুন একজন কাস্টমার আপনাকে বললো, “আপনার কাছ হতে পণ্যটি কেনার অল্প কিছুদিন পরেই এটি কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি হতবাক পণ্যটি কতটা নিম্ন মানের!”
কাস্টমার কোন শব্দ ব্যবহার করেছে তাঁর উপর মনোযোগ দিন। বিশেষ করে “হতবাক” শব্দটির উপরে। কাস্টমার এই শব্দের সাহায্যে তাদের মনে ভাব প্রকাশ করছে। তারা রাগান্বিত না। তারা পণ্যের আচরণ দেখে হতবাক।
এরকম ক্ষেত্রে আপনি এ ধরনের একটি উত্তর দিতে পারেন, “আমি আপনার হতাশার কারণটি বুঝতে পারছি”। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন এই উত্তরটি কিভাবে কাস্টমারদের আরও বেশি উত্তেজিত করতে পারে। আপনি তাদেরকে হতবাক হতে হতাশ হওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন।
এর বদলে মনোযোগ দিয়ে দেখুন কাস্টমার কোন ধরণের শব্দ ব্যবহার করছে এবং সেই শব্দ ব্যবহার করুন। এরকম কিছু বলুন, “এটি আসলেই অবাক ব্যপার! দেখা যাক আপনার প্রোডাক্টটি হঠাৎ করে কীজন্য কাজ করছে না।” এই ধরনের উত্তর কাস্টমারদের জানাচ্ছে আপনি তাদের কথা শুনেছেন। আর এটি তাদের উত্তেজনা বাড়াবে না।
৩) কাস্টমারদের কথা পুনরাবৃত্তি করুন
মনোযোগ দিয়ে কাস্টমারের কথা শোনার বড় একটি অংশ হচ্ছে আপনারা দুইজন একই পেজে আছে তা নিশ্চিত করা। তাই রাগের মূল কারণটি বোঝার পরে আপনি কি বুঝেছেন তা কাস্টমারকে জানান। নিশ্চিত করুন আপনি তাঁর রাগের কারণ সঠিকভাবে বুঝেছেন। এছাড়া এতে কাস্টমার বুঝবে আপনি তার কথা শুনেছেন এবং তাঁর সমস্যা সমাধান করবেন।
উদাহরণ
আপনি এভাবে শুরু করতে পারেন, “তারমানে…”। তারপর উপরের উদাহরণের মত তারা যেরকম শব্দ ব্যবহার করেছে, সে ধরণের শব্দ ব্যবহার করুন। সেই সাথে যদি সম্ভব হয় তাহলে সমস্যাটি কিভাবে তাদের লক্ষ্য পূরণে বাধা দিচ্ছে তা তুলে ধরুন। এতে কাস্টমার বুঝবে আপনি শুধুমাত্র তাদের কথা শুনেননি। কাস্টমারের কেন আপনার সাহায্য দরকার সেটিও আপনি বুঝেছেন।
৪) সমস্যাটি তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ দিন
কাস্টমার রাগান্বিত হলে তাদেরকে সমস্যাটি আপনাকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ দিন। এটি তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করবে। তাদের সময় এবং ধৈর্য্যের জন্য সাধারণ একটি ধন্যবাদই যথেষ্ট হবে।
উদাহরণ
কাস্টমারকে ধন্যবাদ দেয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া। কাস্টমার আপনার সাথে যোগাযোগ করার সাথে সাথে তাদেরকে যোগাযোগ করার জন্য ধন্যবাদ দিন। আপনি যখন তাদের সমস্যা সমাধান করছেন, দীর্ঘসময় তাদের সাথে যোগাযোগ না হলে তাদের ধৈর্য্যের জন্য ধন্যবাদ দিন। এবং কাস্টমার যখন কোন ফিডব্যাক দিবে – সেটি ভাল বা খারাপ হোক – তাদেরকে তাদের ফিডব্যাকের জন্য ধন্যবাদ দিন।
৫) তাদের সমস্যা সমাধানে আপনি কি করবেন তা ব্যাখ্যা করুন
কাস্টমারকে পরিষ্কার ভাবে জানান তাদের সমস্যা সমাধানে আপনি কি পদক্ষেপ নিবেন। যদি আপনার কাজ ছোট হয় তাহলে ফোনে জানাতে পারেন। আর বড় কোন কিছু করতে হলে সবার আগে কি করবেন সেটি জানাতে পারেন। এতে কাস্টমার বুঝবে আপনি তাঁর সমস্যা গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং তারা স্বস্তি বোধ করবে।
উদাহরণ
আপনি কাস্টমারের জন্য একটি টাইমলাইন তৈরি করতে পারেন। আপনি কি কি করবেন এবং সেগুলো করতে কত তারিখের মধ্যে করতে পারবেন তাঁর একটি লিস্ট করুন। এতে আপনি ঠিক কি করছেন এবং কবে তাদের সমস্যা সমাধান হবে তা কাস্টমাররা জানতে পারবে।
৬) প্রয়োজনে ফলো আপের একটি সময় সেট করুন
মাঝেমধ্যে একটি ফোন কলেই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়না। আপনাকে টিমের আরেকজনের সাথে কথা বলা লাগতে পারে অথবা প্রোডাক্ট টিমের সাথে আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে। এসমস্ত ক্ষেত্রে কাস্টমারকে জানান আপনি কেন ফোনে সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। তারপর তাদেরকে একটি সময় দিন যখন আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
উদাহরণ
যদি কোন কাস্টমারের সাথে ফলো আপের প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদেরকে জানান এই বিরতিতে তাদের কি উপকার হবে। যেমন, সমস্যা সমাধানের আগে আপনাকে একজন প্রোডাক্ট এক্সপার্টের সাথে কথা বলা লাগলে কাস্টমারের কাছে বিষয়টি খোলাসা করুন। তাকে জানান ফোন না ছাড়া পর্যন্ত আপনি তাদের সমস্যা সমাধানের কাজ শূরু করতে পারছেন না।
কাস্টমারের এটি পছন্দ না হলে তাকে আশ্বস্ত করুন। তাকে জানান পরবর্তীতে কখন তার সাথে আপনি কথা বলবেন এবং তখন আপনার কাছে কি কি তথ্য থাকবে।
৭) আন্তরিক ব্যবহার করুন
রাগান্বিত কাস্টমার সামলানোর সময় শান্ত থাকা যেমন জরুরি, তেমনি তাদের সাথে আন্তরিক ব্যবহার করাও জরুরি। কাস্টমাররা সহজেই বুঝতে পারে আপনি কখন তাদের সাথে ভালো আচরণ করছেন না। তাই আপনার শব্দ এবং স্বরে যেন শ্রদ্ধাশীল থাকে, সেদিকে মনোযোগ দিন। কাস্টমার আপনার সাথে রাগান্বিত বা উচ্চ স্বরে কথা বললে আপনি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করে টেনসনটি কমান।
উদাহরণ
অনেক সময় কাস্টমাররা আপনাকে একটি “সমস্যা” নিয়ে ফোন দিবে। কিন্তু সমস্যাটি খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে কাস্টমারের ভুলের কারণে সমস্যাটি হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে আপনার কোম্পানিকে দোষ দেয়ায় কাস্টমারকে খোঁচা মারার ইচ্ছা হতে পারে।
এরকম পরিস্থিতিতে আপনার মনে রাখা উচিত যে কাস্টমাররা কি মনে করছে সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দোষ কাস্টমারের হতে পারে, কিন্তু সোশাল মিডিয়াতে মানুষ আপনার কথা পড়ছে না। তারা কাস্টমার কি ভেবেছে সেটি পড়বে। একারণে কি কারণে সমস্যাটি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তারা কিভাবে সমস্যাটি সমাধান করতে পারবে তা তাদেরকে ভদ্রভাবে বোঝান।

No comments:

Post a Comment