Saturday, 17 July 2021

অন্যরকম মাহমুদুল হাসান সোহাগ

 

আজ আমি এমন একজন ব্যক্তির কথা বলব যিনি আমার একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব,
তিনি হলেন মাহমুদুল হাসান সোহাগ, কে বলবে , দাঁড়ি-টুপিওয়ালা এই ভদ্রলোক এক সময় নাস্তিকতার আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন ছিলেন। ইসলামের আলো তাকে অন্ধকার থেকে দ্বীনের পথে নিয়ে এসেছে। চলুন তার সম্পর্কে জেনে আসি,
মাহমুদুল হাসান সোহাগ ১৯৮৩ সালে জামালপুর জেলা-এর সরিষাবাড়ী উপজেলাতে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন শুরু জামালপুর জেলা-এর সরিষাবাড়ী উপজেলাতেই। সেখানে প্রথমে নাসিরউদ্দিন কিন্ডারগার্ডেন তারপর রিয়াজউদ্দিন তালুকদার উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) পর্যন্ত পড়ালেখা করেন । উনি এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডের মধ্যে ৫ম হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন।তিনি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এবং ঢাকা বোর্ড থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। তিনি বুয়েটের ২০০০ ব্যাচের ইইই এর ছাত্র ছিলেন।তখন থেকেই মূলত তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যার জন্য দেশেই বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে সমাধানের চেষ্টা করতেন।সফলতার সথে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বা ইলেট্রিক্যাল বিভাগ থেকে বিএসসি পাস করেন। পাস করার আগেই তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর আইআইসিটিতে (IICT) রিসার্চ এসিস্টটেন্ট হিসেবে ছিলেন এবং পাস করার পর রিসার্চ ইন্জিনিয়ার হিসেবে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন।সেটাই ছিলো তার প্রথম এবং শেষ চাকরি। তার মূল লক্ষ্য ছিলো উদ্যোক্তা হওয়ার। (উল্লেখ্য যে ২০০০ সালে মাত্র ছয় হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাহমুদুল হাসান সোহাগ প্রতিষ্ঠিত উদ্ভাস এর যাত্রা শুরু হয়)
বর্তমানে তিনি একাধারে প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিঃ, টেকশপ বাংলাদেশ লিঃ,রকমারি, অন্যরকম সফটওয়্যার লিঃ, অন্যরকম প্রকাশনী লিঃ, অন্যরকম সল্যুশনস লিঃ, অন্যরকম ওয়েব সার্ভিসেস লিঃ, অন্যরকম ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি লিঃ এর মতো সফল প্রতিষ্ঠানগুলোর। তিনি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড-এর একাডেমিক কাউন্সিলরও ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড-এর একাডেমিক কাউন্সিলরও ছিলেন। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন(EVM) তৈরি করেছেন। যার ঝুলিতে আছে দেশ-বিদেশের অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মাননাও। বাংলাদেশের প্রথম অনলাইনভিত্তিক স্কুল অন্যরকম পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা তিনিই; যার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আয়মান সাদিক তৈরি করেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন স্কুল ‘টেন মিনিট স্কুল’।
‘টেন মিনিট স্কুল’ এর প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক একবার উনাকে উনার জীবনের লক্ষ্য জিজ্ঞেস করলেন, উনি কি উত্তর দিলেন, জানেন? উনার জীবনের লক্ষ্য হলো, “যতো বেশি সংখ্যক মানুষকে নিয়ে জান্নাতে যাওয়া যায়।” তার ভাষায় মুসলিমদের নতুন করে লাইফের পার্পাস বা গোল খুঁজার কিছু নেই। আল্লাহ তয়ালা নিজেই আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য ঠিক করেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
এই মানুষটাই আগে ছিলেন নাস্তিক, সেকুলার। সেই মানুষটা একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বদলে হয়ে গেলেন একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম। সমাজের তথাকথিত সফলতার সংজ্ঞায় যিনি একজন অন্যতম সফল মানুষ তিনিই কিনা খুঁজছেন অন্য সফলতা!
আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন সফল মানুষ, যিনি কিনা পেয়েছেন উনার রব; আমাদের সবার রব, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার হিদায়াত। তাই তিনি ছুটে চলেছেন চির সফলতার দিকে… …….
উনার জীবনি লিখতে গিয়ে আমার একটা কুরআনের আয়াতের কথা খুব মনে পড়ছে, সেইটা দিয়ে আজ আমার লেখার ইতি টানছি,
“ জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবলমাত্র কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে, সুতরাং যাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে নিশ্চই তারাই সফলকাম। আর দুনিয়ার জীবন ছলনার বস্তু ছাড়া আর কিছু নয়।”
[সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫]
{তথ্যসুত্র; বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ইউটিউব ইত্যাদি }
_________________________________
17/7/2021

ইভ্যালি উত্তাল ঢেউকে আপনি সামলাবেন?

 গত দুইবছরে আমি কোথাও ইভ্যালি নিয়ে কোন কথা বলিনি, কিন্তু অসংখ্য লেখা পড়েছি, পজিটিভ, অধিকাংশই নেগেটিভ৷ ইভ্যালি থেকে আমি কখনও কোন কিছু কিনিনি, কেনার প্রয়োজন মনে করিনি। আমার ফিলোসফি হলো, যে জিনিস আমার প্রয়োজন সেটা যতো দামই হোক, আমি কিনবো, আর যেটার দরকার নেই সেটা মাগনা দিলেও নিবো না।

ইভ্যালি কনস্যুমারিজম বা ভোগবাদিতা উস্কে দেয়। ৫ হাজার টাকায় স্মার্ট টিভি, ৮ হাজার টাকায় ওয়াশিং মেশিন দেখলে কার না হাত উশখুশ করবে কেনার জন্য, যদিও সেটার দরকার হয়তো নেই। এজন্য আমি সজতনে ইভ্যালিকে এড়িয়ে চলেছি। কিন্তু একজন সচেতন ইন্ডাস্ট্রি স্টেইকহোল্ডার হিসেবে তাদের প্রতিটি মুভ, প্রতিটি অফার, প্রতিটি বক্তব্য, কাউন্টার বক্তব্য শোনার, পড়ার চেষ্টা করেছি।
বড়ভাই হাসানের মতে, ইভ্যালি হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে কোন পন্য অর্ধেক দামে পাওয়া যায় কিন্তু সেটার জন্য ৪/৫/৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়। ইভ্যালিতে তিনি এমন পন্যই অর্ডার করেন যেটা আগামী ৪-৫ মাস না হলেও চলবে। তাৎক্ষণিক কোন পন্য দরকার হলে তিনি অন্য কোন চ্যানেলের দারস্থ হন। ইভ্যালির প্রায় সকল ক্রেতা আমার ধারণা এই মডেলে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
ইভ্যালি নিয়ে অনেক এনালিসিস, অনেক গবেষণা পড়েছি, আমার কাছে তাদের বিজনেস মডেল মনে হয়েছেঃ
• শুরুতে তারা ১০ টাকায় পেনড্রাইভ, ৫ টাকায় টিশার্ট টাইপ দিয়ে তাদের ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল, উদ্দেশ্য ছিলো এ্যাডভার্টাইজমেন্ট বাবদ বরাদ্দকৃত টাকাটা গ্রাহকদেরকে দিয়ে ওয়ার্ড অফ মাউথের মাধ্যমে নতুন কিছু ক্লায়েন্ট বেস তৈরি করা। এই ক্যাম্পেইনগুলোর অভূতপূর্ব সাফল্য এবং গ্রাহকদের পিয়ার প্রেসারে তারা এই আর্থ শেকিং ডিস্কাউন্ট থেকে বের হতে পারেনি, কন্টিনিউ করে গেছে, এখনো করছে।
• এই হিউজ ডিসকাউন্ট তারা কিভাবে দিচ্ছে, খুবই সহজ, একজনের টাকা আরেকজনকে দিয়ে। নতুন অর্ডার, সাপ্লায়ারের ক্রেডিট সব মিলিয়ে তারা একটা বাবল ক্রিয়েট করতে পেরেছে।
• পুরো প্রসেসটা তারা চালিয়ে যাচ্ছে নতুন একটি দিনের অপেক্ষায়, একটা ভালো ইনভেস্টমেন্ট। ১-২ হাজার কোটি টাকার একটা ইনভেস্টমেন্ট পেলে তারা ধার দেনা, পেন্ডিং অর্ডার থেকে শুরু করে সব কিছু শোধ করে দিতে পারবে, মাঝখান থেকে ৮-১০ টা টেক বিজনেস, ৫০-৬০ লাখ গ্রাহক, ব্রান্ড ভ্যালু- এইগুলো এ্যাসেট হিসেবে থাকবে।
মোটাদাগে এই হলো ইভ্যালি নিয়ে আমার বুঝ। ইভ্যালিকে যদি আপনি ট্রেডিশনাল বিজনেসের চশমা দিয়ে দেখেন তবে অনেক ফাঁকফোকড় ধরা পড়বে। আবার যদি নিও বিজনেস সম্বন্ধে যারা ধারণা রাখেন তাহলে দেখবেন অনেক উদাহরণ পাবেন বিশ্বজুড়েই এমন।
একটা টেকবেসড ই-কমার্স কোম্পানির জন্য দুই বছর খুবই স্বল্প সময়। এই সময় সবাই ক্যাশ বার্নিং স্টেজে থাকে, এখন এই সময়ে যদি আপনি তাদের ব্যালেন্স শীট নিয়ে টান দেন এ্যাসেট-লায়াবিলিটির পার্থক্য অনেক বেশিই মনে হবে। এ্যামাজন কত বছর পর রিসেন্টলি প্রফিটে এসেছে, উবার কিছুদিন আগে স্টক মার্কেটে এসেছে এই ঘোষণা দিয়ে, আমরা জানিনা আমরা কবে প্রফিটে আসবো, রকমারি এই সেদিন প্রফিটে আসলো, চালডাল,খাসফুড, পারমিদা- জানামতে সবাই স্ট্রাগল করছে প্রফিট নিয়ে। আমার নিজের ছোট্ট আহলান থেকে জানি এইসব ব্যবসা থেকে প্রফিট বের করা কতটা কষ্ট।
আর প্রফিট খুবই সেনসিটিভ একটা টার্ম। কেউ যদি বলে আমি খুব লাভে আছি, কাস্টমাররা নিজেকে ডিপ্রাইভড ও লস্ট মনে করে। কেউই তাদের প্রফিটিবিলিটির কথা পাবলিকলি শেয়ার করতে চায় না, সেটা মুদির দোকান হোক আর ইভ্যালি হোক। সব সেলার যখন গ্রাহকের কাছে বলতে থাকে, ভাই একদম লাভ করি নাই, সেখানে ইভ্যালিকে স্ট্রাগল করতে হচ্ছে নিজেকে প্রফিটেবল প্রমাণ করার জন্য। দুনিয়াটা বড়ই আজিব জায়গা!!
ইভ্যালিকে যারা এমএলএম বলছেন তাদের নিয়ে কোন কথা নেই, তাদের জ্ঞানের বড়ই অভাব, এটা নিয়ে লিখতেও রুচিতে বাঁধে। আর যারা পঞ্জি স্কিম বলছেন তাদের নিয়ে দুইটা কথা আছে। পঞ্জি স্কিম হলো একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরেকজনের টাকা পরিশোধ করা। এই স্কিম আমরা ছোট, বড় সবাই চালাই, বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা। আমার কথাই বলি, আমি মধু বেচে ব্যাগের কাপড় কিনি, বেতনের টাকা পেয়ে আরেকজনের বেতন দেই, একজনের কাছ থেকে ধার করে আরেকজনের টাকা শোধ করি। জীবন মানেই পঞ্জি গেইম। আমি আর দারদা ভাই মিলে একটা ডেলিভারি কোম্পানি দেয়ার প্লান করেছিলাম, সেখানে হিসেব করে দেখেছি ১৫-২০ দিনের জন্য ভালো একটা এমাউন্ট সেই ব্যবসা থেকে বের করতে পারতাম যেটা আমরা আমাদের বা অন্য ব্যবসায়ীদের শর্ট-টার্ম ধার দিতে পারতাম। পুরো টাকাটাই কিন্তু অন্যের টাকা।
ব্যবসা মানেই পঞ্জি খেলা৷ কোন ব্যবসায়ীই টাকা বসিয়ে রাখতে চায় না। সাপ্লায়ারের কাছে দুইদিন পরে দিয়ে, কাস্টমারের কাছ থেকে দুইদিন আগে নিয়ে যতটা পারা যায় বাবল ক্রিয়েট করা। এই কাজটাই ইভ্যালি করেছে, করছে, একটু বড় স্কেলে, একটা বড় ইনভেস্টমেন্টের আশায়। এখন এটাকে যদি পঞ্জি বলেন তাহলে আপনার জ্ঞানের দৈন্যতা নিয়ে আমার করুণা হবে।
এই যে এখন স্টার্টাপ কালচার চলছে, স্টার্টাপের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানেন, একটা স্টার্টাপ সাকসেসফুল হওয়া মানে প্যারালালি আরেকটা ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হওয়া। উবার সাকসেসফুল হওয়া মানে ট্যাক্সিওয়ালাদের স্ট্রাগল করতে হবে, চালডাল সফল হওয়া মানে মুদি দোকানদারদের বেচাকিনি কমে যাবে, ইভ্যালি সফল হওয়া মানে শোরুম ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, ছোট ইকমার্স ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। হারিকেন ইন্ডাস্ট্রির হাতে হারিকেন ধরে যাবে বলে চার্জার লাইটের অগ্রযাত্রা আমরা রুখে দিতে পারিনা।
এফটুসি (ফ্যাক্টরি টু কনস্যুমার) বা বাল্ক পারচেজ মডেল সফল হলে শোরুম ব্যবসায়ীরা ধরা খাবে, ছোট ইকম কম চলবে। আজকে ইভ্যালি দেশী প্রতিষ্ঠান, রাসেল ভাই গরীব মানুষ বলে সবাই মিলে চেপে ধরে হয়তো থামিয়ে দিতে পারবেন কিন্তু একের পর এক আসা সমুদ্রের কতগুলো উত্তাল ঢেউকে আপনি সামলাবেন? আজকে ইভ্যালি এসেছে কালকে এ্যামাজন আসবে, পিন্দোদো আসবে, ডিস্কাউন্ট দিয়ে ধ্বসায় দিবে, তখন পারবেন পাড়ার মাস্তানের মতো এরকম হ্যাডমগিরি দেখাতে?!?
কনস্যুমারের চাহিদা বুঝতে হবে, কনস্যুমার কমদামে পন্য চায়, কনস্যুমার আপনার শোরুমের এসির বিল দিতে চায় না, আপনি মডেল নাচাবেন তার চার্জ দিতে রাজি না, সে চাইবে কোথা থেকে কমে পাওয়া যায়। আজকে ইভ্যালির সাথে সাথে আরও অসংখ্য ডিসকাউন্ট বেসড ই-কমার্স প্লাটফর্ম দাঁড়িয়ে গেছে। ইভ্যালির সাথে সাথে এগুলোকেও হয়তো চেপে ধরবেন কিন্তু কনস্যুমারের শ্বাশত এই চাহিদা কি দাবিয়ে রাখতে পারবেন?!?
ইভ্যালির সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, মানুষের এই কোর চাহিদার জায়গাটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া। ইভ্যালি যদি এযাত্রায় সফল হতে না-ও পারে, তাদের যদি থামিয়ে দেয়া হয়, তবুও এই বিজনেস মডেল থেমে যাবার নয়। হয় প্রোডিউসাররা নিজে এই মডেলে কাজ করবে, নয়তো কোন জায়ান্ট এসে এগিয়ে নিয়ে যাবে অনেকদূর। এই আমরাই গ্রামের কৃষক কেন টমেটোর দাম পায় না তা নিয়ে হাহুতাশ করি, আবার কেউ যখন সরাসরি কৃষকের থেকে পন্য নিয়ে গ্রাহকের ঘরে কমদামে পৌছে দেবার চেষ্টা করে তার কন্ঠরোধ করি। থার্ড পার্টি ব্যবসা, শোরুম ব্যবসা নিকট ভবিষ্যতে থাকবে না। যতদ্রুত আমরা এই পরিবর্তনকে মেনে নিবো, নিজের ব্যবসার ধরনকে পরিবর্তন করবো ততই লাভ। নাহলে হারিকেন ব্যবসায়ীর মতো হাতে হারিকেন ধরা ছাড়া উপায় থাকবে না।
ইভ্যালির জন্য শুভকামনা। ইভ্যালি টিকে থাকুক দেশের ই-কমার্সের জন্য, টিকে থাকুক তার ৫০-৬০ লাখ গ্রাহকের জন্য, অসংখ্য সেলারের জন্য, থাউজেন্ডস অফ রাইডারের জন্য। এতগুলো লোকের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে নিজের হীন স্বার্থের জন্য যারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে লেগেছেন তাদের জন্য একরাশ ঘৃণা!

Friday, 2 July 2021

সেলস নাকি ব্র্যান্ডিং

 তকাল জিগেস করেছিলাম, প্রডাক্ট সেলসের জন্য কি ব্র্যান্ডিংয়ের দরকার হয়? এর উত্তর লিখতে বস্লাম৷

বেশীরভাগ একাডেমিয়ানরা ব্র্যান্ডিংয়ের পক্ষে। অর্র্থাৎ, ব্র্যান্ডিং করলেই সেলস আসবে - এটা আদতে একটা কেতাবী সংজ্ঞা। এবং এই সংজ্ঞা দুনিয়ার সব দেশ ও জাতি - মতান্তরে দুনিয়ার সব বাজার ও তার কাস্টমারের জন্য প্রযোজ্য নয়।
অপরদিকে বেশীরভাগ কর্পোরেট প্রফেশনালসরা সেলসের পক্ষে। কোন দেশে ব্র্যান্ডিং করলেই সেলস আসবে সত্য (যেমনঃ আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান দেশগুলো) - আবার কোন দেশে সেলসই মোদ্দা কথা, ব্র্যান্ডিংয়ের খুব একটা ভূমিকা সেলসে অনেক সময়ই দেখা যায় না (যেমনঃ ভারতীয় উপমহাদেশের রাষ্ট্রগুলো, বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।)
এটা নিয়ে প্রচুর বাদানুবাদ হয়েছে। ব্র্যান্ডিংয়ের লোকেরা বলে - ব্র্যান্ডিং হলে সেলস এমনিতেই আসবে। আর সেলসের লোকেরা বলে, সেল ঠিকমতো করতে পারলে ব্র্যান্ডিংয়ের কোনই দরকার নাই। আবার কেপিআই মিট না হলে তারা পরস্পরকে নিয়ে ব্লেম গেম খেলে এমন নজিরও অসংখ্য রয়েছে!
আপনি যদি আমাকে এই প্রশ্ন করেন - তাহলে বলবো, এইটা এক কথায় উত্তর দেয়া সম্ভব না।
আমি বলবো - ইট ডিপেন্ডস!😄
এই ধরনের উত্তর শুনলে অনেকেই বিরক্ত হবেন, ভাববেন নিউট্রাল উত্তর দিয়ে হয়তো ব্র্যান্ডিং আর সেলস - উভয় পক্ষের কারোই বিরাগভাজন না হবার চেষ্টা করছি।
হাহা, ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। আসলে এটা নির্ভর করবে মার্কেট, প্রডাক্ট, কোম্পানির ভিশন-মিশন ইত্যাদির উপর! যেমনঃ কোন মার্কেটে আমি পন্যটা বাজারজাত করছি, সেখানকার কাস্টমার ডেমোগ্রাফিক কি, কাস্টমারদের বায়িং হেবিট কি ধরনের, কাষ্টমার বায়িং ডিসিশান কিভাবে নেয় - ইত্যাদি এনালাইসিস না করে হুট করে একটা কেতাবি সংজ্ঞা বলে দিলেই হবে না।
একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই।
এই দেশের প্রায় ৭০% ক্রেতা বায়িং ডিসিশান নেয় পুশ সেলিংয়ের কারণে। বাকী ৩০% ক্রেতা কাউন্টার সেলিংয়ের কাস্টমার।
কাউন্টার সেলিং হলো - আপনি আগে থেকেই একটা পন্য কিনবেন বলে মনস্থির করে দোকানে গিয়ে সেটা কিনছেন। এবং আপনি এতটাই ডিটারমাইন্ড যে, পন্যটি দোকানের স্টকে না থাকলেও আপনি অন্য কোন প্রডাক্ট কিনেন না। মানে দোকানের কাউন্টার থেকে যেটা কিনে নিয়ে আসেন - সেটাই কাউন্টার সেলিং! একই কারণে, প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে সমস্ত মেডিসিন কেনা যায় - তাকে এক কথায় ’ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ’ বলা হয়। যেমনঃ নাপা, প্যারাসিটামল।
পুশ সেলিং হলো - আপনি বিক্রেতার প্ররোচনায় বা সেলস পিচে পটে গিয়ে যে পন্য কিনেন, সে ধরনের বিক্রয় পদ্ধতিতে বলে পুশ সেলিং! মানে সেলকে পুশ করা হয়।
ডেটা বলছে, কাউন্টার সেলিংয়ের চাইতে পুশ সেলিংয়ের কাস্টমার দ্বিগুনেরও বেশী। তাহলে যদি একটা ব্র্যান্ড ডিসিশান নেয় যে, সে তার সেলস টার্গেট ফিলাপ করতে ব্র্যান্ডিংয়ের চাইতে পুশ সেলিংয়ে বেশী ইনভেস্ট করবে, তাহলে কি তাকে দোষ দেয়া যায়?
যেহেতু এই দেশের ৭০% কাস্টমারের বায়িং ডিসিশানকে সরাসরি ইনফ্লুয়েন্স করছে বিক্রেতারা, সেহেতু এই দেশের পুশ সেলিং মানে মোটা দাগে ট্রেড মার্কেটিংয়ে ইনভেস্ট করা! মানে সেলস এজেন্ট, পাড়ার মুদি দোকানদার - এদের কমিশন বাড়িয়ে দেন - এরাই চোখবুজে আপনার সেলস এনে দিবে। এরপর আপনি ব্র্যান্ডিং করলে ভালো, না করলেও সমস্যা নাই। সেলস কমবে না। কারণ আপনার সেলস ট্রেড মার্কেটিংয়ের উপর নির্ভরশীল! এটিএল/বিটিএল এর উপর নয়।
প্রশ্ন করতে পারেন, এমন একটা ব্র্যান্ডের নাম বলেন যার ব্র্যান্ড ভ্যালু ভালো, অথচ সেলস পড়তির দিকে।
এমন একটা না, কয়েকটার নাম বলছি। মিঃ কুকিজের বিস্কুট! ব্র্যান্ড ভ্যালু এখনো বেশ ভালো, অনেক কাস্টমারের TOMA এ আছে এই ব্র্যান্ড! কিন্তু সেল কিন্তু আগের চাইতে অনেক কম হয়। এরপর ধরেন তিব্বত সাবান। কিংবা স্যান্ডেলিনা বিউটি সোপ। অনেককে সাবানের কথা বল্লেই এর কথা বলবে, অথচ সেল কিন্তু অত আহামরি নয়। ছোট বেলায় আমাদের বাসায় প্রতি ঈদের দিন স্যান্ডেলিনার সাবান দিয়ে গোসল করে ঈদের জামাতে যেতাম। আর রেগুলার সোপ হিসেবে লাক্স ইউজ করা হতো।
তেমনি ভাইস ভার্সার উদাহরণও দেয়া যাবে। অর্থাৎ এমন ব্র্যান্ড, যার নাম তেমন কেউ শুনেনি, অথচ সেলস ভলিউমে সেরা!
এর উদাহরণ হতে পারে কাপড় ধোয়ার গুড়া সাবানের ভারতীয় ব্র্যান্ড ঘড়ি ডিটারজেন্ট! অনেকেই হয়তো এই ব্র্যান্ডটার নামও জানেন না! কারণ তারা এই দেশে তেমন কোন ব্র্যান্ডিং করেনি। বাংলাদেশে আমার কখনো এই ব্র্যান্ডের কোন বিজ্ঞাপন চোখে পড়েনি। অথচ ২০১৮ এর সেলস ডেটা অনুযায়ী বাংলাদেশে লন্ড্রি ডিটারজেন্ট ব্র্যান্ডের সেলস ভলিউমের দিক থেকে ঘড়ি রয়েছে ৩ নম্বরে। প্রথম ও ২য় যথাক্রমে রিন ও হুইল!
প্রশ্ন করতে পারেন, তাইলে সার্ফ এক্সেল গেলো কই? বাজারে তো সার্ফ এক্সেল এর ব্র্যান্ডিং সবচাইতে শক্তিশালী!
ঘটনা হলো, সার্ফ এক্সেলের টিজি আলাদা। জেট এরও। খুব লয়্যাল, আর প্রিমিয়াম এদের টিজি! জেট খুব সম্ভবত দেশী লন্ড্রি ডিটারজেন্টের ভেতর আমাদের দেশের সবচাইতে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড, দামও সবচাইতে বেশী! এই কারণেই আপনি এই ব্র্যান্ডটাকে পাড়ার মুদি দোকানে পাবেন না। পাবেন বড় বড় সুপারশপে! অথচ ছোট বেলায় আম্মুকে এটা দিয়েই কাপড় ধুতে দেখেছি। আমি যখন হাই স্কুলে পড়ি, তখন বিটিভিতে জেটের টিভিসি হরহামেশাই দেখা যেতো, অথচ এখন একেবারেই দেখা যায় না। সার্ফ এক্সেল, রিন, হুইল - তিনটারই আপনি মিনি প্যাক পাবেন কিন্তু আপনি কখনো জেটের মিনিপ্যাক খুঁজে পাবেন না। কারণ জেটের কাস্টমার কখনো মিনিপ্যাক কিনেও না। ফ্যামিলি প্যাক কিনে।
কল্লোল গ্রুপের প্রোডাক্ট তাদের গুনগত মানের জন্য খুব বিখ্যাত, মার্কেটে হিউজ ডিমান্ড, তবে কোন এক অদ্ভুত কারণে এরা ম্যাস মার্কেট থেকে সরে এসে নিজেদেরকে প্রিমিয়ামে প্লেস করেছে। এখন অল্প কিছু সিলেক্টেড জায়গা ছাড়া ওদের প্রোডাক্ট পাওয়া যায় না কোথাও! সুপারশপগুলোতে এদের রুম স্প্রে আর নিউট্রি-সি বেশ সুলভ, তবে FAY এর টিস্যু বক্স আমি শেষবার কোথায় দেখেছি মনে পড়ে না, সব জাগায় বসুন্ধরা টিস্যু!
আমি সম্প্রতি এক মজার তথ্য জানতে পেরেছি স্বপ্ন সুপারশপের উচ্চপদস্ত একজন নারী-অফিসারের কাছ থেকে। তিনি জানালেন - “স্যোশিও ইকোনমি এর C ক্লাসের কাস্টমারেরা সারা মাসের জন্য হুইল কিনে এবং সাথে কেনে সার্ফে এক্সেলের মিনি প্যাক, তারা তাদের দামী জামা কাপড় ধোয়ার সময় ৮০ ভাগ হুইলের সাথে ২০ ভাগ সার্ফ মেশায় যাতে ধোয়াটা ভালো হয়। A এবং B এর মানুষজন মেইনলি রিন কিনে। তবে ভালো জামা কাপড় সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধোয়। খুব স্মল সেগমেন্ট প্রাইমারি ডিটারজেন্ট হিসাবে এক্সেল ব্যাবহার করে!” আমাদের বাসায় গত ৪/৫ বছর ধরে প্রাইমারি ডিটারজেন্ট হিসেবে এক্সেল ব্যবহার করা হয়।
আচ্ছা, ধান ভানতে শীবের গীত না গেয়ে প্রসংগে ফিরে আসি। বলছিলাম ঘড়ি ডিটারজেন্টের কথা, যা বাংলাদেশের কতজন কাস্টমারের টপ অব দ্য মাইন্ডে আছে, আমার সন্দেহ - অথচ সেলসে ৩ নম্বরে! অবশ্য ভারতে এর ব্র্যান্ডিং একেবারে মন্দ নয়। এদের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হচ্ছেন অমিতাভ বচ্চনের মতো ডাকসাইটে সিনিয়র সেলিব্রেটি!
কোম্পানির উদ্দেশ্য যদি থাকে প্রচুর রেভিনিউ জেনারেট করা, তাহলে উচিত হবে শুরুতেই ব্র্যান্ডিংয়ের পেছনে টাকা না খরচ করে শুরুতে বরং সেলস জেনারেট করার চেষ্টা করা - আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ছোট কোম্পানিগুলো বা নতুন ব্র্যান্ডগুলো তাই করে। ট্রেড মার্কেটিং করে দেদারসে! এতে করে তারা ভবিৎষতে ব্র্যান্ডিং খাতে বিনিয়োগ করার মতো যথেষ্ঠ পরিমান পয়সাও কামাই করে ফেলতে পারে।
অপরদিকে কোম্পানির উদ্দেশ্য যদি থাকে শক্ত ব্র্যান্ড গড়ে দশকের পর দশক বাজারে টিকে থাকার, তাহলে ব্র্যান্ডিংয়ের বিকল্প নেই। তখন সেলসে ফোকাস না করে কোম্পানির উচিত ব্র্যান্ডিংয়ে টাকা বার্ণ করা! এটা সাধারনত ঐ সব কোম্পানিই করে, যারা আগে থেকেই বিপুল পরিমান টাকা-পয়সা নিয়ে বাজারে নামে। যেমনঃ হালের আলিশা মার্ট! এরা শুরু থেকেই এটিএল/বিটিএল/ডিজিটাল করে ফাটায় ফেলতেছে, কিন্তু তাদের সেল তো এখন পযন্ত তদানুপাতিক হয়নি।
তবে তুমুল ব্র্যান্ডিং করলেই যে বাজারে দীর্ঘদিন টিকে থাকার নিয়তে আর্বিভূত হয়েছে, এমনটা সব কোম্পানি/পন্য/ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। আমি এর উদাহরণে কোন কোম্পানির নাম বলবো না। নাম বল্লে চাক্রি থাকবে না।😕
অপরদিকে, শুরুতে সেলসে ফোকাস রেখে ধীরে ধীরে নামকরা ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে, এমন অনেক ব্র্যান্ড দেশে আছে! যেমনঃ হালিমা মোবাইল। কিছুদিন আগেই এই ব্র্যান্ড নিয়ে পিঅয়ার হল নিউজ মিডিয়াতে। আমি খোজঁ নিয়ে দেখি - এটি মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও টেকসই ব্র্যান্ড। রীতিমতো বিদেশী মোবাইল ব্র্যান্ডগুলোর সাথে পাল্লা দিচ্ছে, কিন্তু হাইলি এফরডেবল টু ম্যাস পিপল!
প্রাণ-আরএফএলকেও আমি এই কাতারে রাখতে চাই। প্রথমে তারা ব্র্যান্ড গড়ায় তেমন মনোযোগ দেয়নি। এখন দেশের অনেকগুলো নীশ বাজারে সেরা ব্র্যান্ডের আসন প্রাণ-আরএফএল দখল করে আছে। যেমনঃ প্লাস্টিক ওয়্যার! এবং প্রাণ খুব সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র ব্র্যান্ড (বিস্কুট) যা ভারতের বাজারে ভারতীয় ব্র্যান্ডকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেছে। এটা মুটামুটি অবিশ্বাস্য একটা সফলতা আমাদের জন্য!
কারণ ইন্ডিয়ান বাজার অসম্ভব রকমের কম্পিটিটিভ বাজার, এবং তারা নিজেদের ব্র্যান্ডকেই বেশীরভাগ সময় প্রমোট করে। সেখানে ভীনদেশে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রাণের বিস্কুট তাদের নিজেদের অনেক ব্র্যান্ডের চাইতেও জনপ্রিয় হয়ে গেছে! যা হোক, আমার বই নন-মার্কেটারদের জন্য মার্কেটিং তে আমি এ বিষয়ে বিশদ লিখেছি ইতোমধ্যে, সুতরাং এখানে বাহুল্য কলেবর বৃদ্ধির কোন মানে হয় না।
তবে আমার মতে সবচাইতে প্রমিত চর্চা হতে পারে, শুরুতে সেলস ও পরবর্তীতে ব্র্যান্ডিংয়ে ফোকাস করা। বড় কোম্পানিগুলোর প্র্যাকটিস দেখলেই বুঝতে পারবেন। ইউনিলিভার তাদের FMCG এর প্রডাক্টগুলোকে সারা বছরই প্রমোট করে, লাক্সকে একটা সময় কন্টিনিউয়াসলি হ্যামারিং করেছে টিজির কাছে। এখন কিন্তু অতটা দেখা যায় না। হয়তো কিছুদিন পর আবার শুরু করবে। অপরদিকে অনেক বড় বড় সাবান কে - যাদেরকে লাক্স থ্রেট মনে করেছে - রাতারাতি খেয়ে দিয়েছে।
আচ্ছা, এমন কোন উদাহরণ আছে - যার ব্র্যান্ডিং আর সেলস ভলিউম দুটোই সমান তালে উচ্চ শিখরে থাকার পরেও হারিয়ে গেছে? আছে। আমার আপাতত মনে পড়ছে এরোমেটিক হালাল সোপের কথা।
সে সময় এই সাবানের বিজ্ঞাপন দিয়ে ঢাকার বিলবোর্ড ছেয়ে ফেলেছিলো যমুনা গ্রুপ! আর সেলস ভলিউমের কথা যদি বলতে হয় - রাতারাতি ১৪% মার্কেট শেয়ার করায়ত্ত! মনে রাখতে হবে, সে সময়েও ইউনিলিভারের লাক্স বাজারে দুর্দন্ড প্রতাপে রাজত্ব করছিলো। সুতরাং, বাজারে নেমেই সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্র্যান্ডের রাতারাতি ১৪% বাজার নিয়ে ফেলাটা কিন্তু চাট্টিখানা কথা ছিলো না।
তবে ব্র্যান্ডিং করে সেল নিয়ে আসার পরেও ব্র্যান্ডিং বন্ধ করা যাবে না। এটা একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। যেমনঃ এরোমেটিক হালাল সাবানের সময় লাক্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো তাদের সাবানে যেহেতু প্রাণীর চর্বি আছে, সেহেতু মুসলমানরা ইউজ করতে পারবে না।
এমন অভিযোগ উঠার পরেও লাক্স তাদের সাবানের ব্র্যান্ডিংয়ে ইনভেস্ট করা বন্ধ তো করেইনি, উল্টা বাড়িয়ে দিয়েছিলো। তারা তাদের বিদেশী প্লান্ট থেকে লাক্স আমদানি করা শুরু করলো, যার ফলে তাদের খরচ বেড়ে গেলেও লস দিয়ে দেশের বাজারে আগের দামেই বিক্রি করতো। এরোমেটিকের হালাল সাবান তাদের এতটাই চাপে রেখেছিলো! কিন্তু দিন শেষে বিজয়ীর হাসিটা লাক্সই হেসেছে! একটা ইন্ডিয়ান কোম্পানির কাছে খোদ এরোমেটিক ব্র্যান্ডই বিক্রি হয়ে গেলো, পরে পুরোপুরি হারিয়ে গেলো। আর লাক্স হয়ে উঠলো সোপ ব্র্যান্ড থেকে সুপার ব্র্যান্ড!
একই কাজটা এ্যাপলও করে। এ্যাপলের কাস্টমার লয়ালটি এত বেশী শক্ত, তাদের ওয়ার্ড অব মাউথ মার্কেটিং এত দুর্দান্ত, তাদের আর্নড মিডিয়া এত এত বেশী, তারপরেও তাদের বাৎসরিক মার্কেটিং বাজেট থাকে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০১৫ সালে ছিলো ১.৮ বিলিয়ন ডলার! কারণ তারা জানে, ”মার্কেটিং ছাড়াই তো আইফোন বিক্রি করে কুলাতে পারছি না, তাইলে আর মার্কেটিং বাজেটের দরকার কি?” - এটা ভেবেছে তো মরেছে!
এই দেশের টোটাল গ্রোসারি বাজারের মাত্র ২% বিক্রি হয় ই-কমার্স (যেমনঃ চাল ডাল ডট কম) এবং মর্ডান ট্রেড (যেমনঃ অফলাইন গ্রোসারি শপ - স্বপ্ন, এগোরা, মিনা বাজার) এর মাধ্যমে। বাকী ৯৮% বিক্রি হয় খোলা বাজারে, কাচাঁ বাজারে, মুদি দোকানে। এই ২% যখন বেড়ে ১০% হবে, তখন এই দেশের টোটাল ব্র্যান্ড-মার্কেটিংয়ের দৃশ্যপট আমূল বদলে যাবে। বিজ্ঞাপনে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় চেঞ্জ আসবে।
যেমনঃ অস্ট্রেলিয়ার টোটাল গ্রোসারির ৬০% সে উপমহাদেশের মাত্র দুইটা গ্রোসারি ব্র্যান্ড (Woolworths & Coles) সার্ভ করে! যার বাৎসরিক মূল্য প্রায় ১০০ বিলিয়ন অজি ডলার! এ কারণেই ঐ দেশের মিডিয়া ও ডিজিটাল এজেন্সি তাদের গ্রোসারি বিজ্ঞাপন বানায় উলিস আর কোল্স কে টার্গেট করে। উলিস নির্ধারন করে অষ্ট্রেলিয়াতে গ্রোসারি ব্র্যান্ডিং কেমন হবে। এটা এতটাই চমকপ্রদ কেইসস্টাডি যে, এই বিষয়ে আলাদা করে একদিন বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে।
যা বলছিলাম, ২% এর কথা। আমাদের দেশের অনেক বড় ব্র্যান্ড তাদের নতুন কোন ভ্যারিয়েন্ট বাজারে ছাড়লে তারা সুপারশপের মাধ্যমে ঐ ২% কাস্টমারের কাছে ট্রায়াল-বায়িং করানোর চেষ্টা করে। আর ঐ ২% ক্রেতাদের বেশীরভাগই সুপারশপ থেকে ফ্রিতে বা হাই ডিসকাউন্টে ট্রায়াল-বায়িং করে পরবর্তীতে সেইটা কিনে কাচাঁ বাজার থেকে! এ কারণেই, কোম্পানিগুলোর মূল ফোকাস থাকে, ৯৮% মার্কেটের উপর, ২% এ তারা তখনই গোনায় ধরে যখন তাদের ট্রায়াল-সেলিংয়ের দরকার পড়ে!
May be an image of text that says 'সেলস নাকি ব্র্যান্ডিং- কোনটা বেশী দরকারী? প্রলয় হাসান'ব্র্যান্ড গড়ার কথা বল্লাম, এবার ব্র্যান্ড ভাংগার কথা বলি।
উপরে অলরেডি এরোমেটিকের কথা বলেছি। আরেকটা হলো, পেপস জেলের ঘটনা। ইউনিলিভার খুব মোটা অংকে বাংলাদেশের প্রথম জেল টুথপেষ্ট পেপস জেলকে কিনে নিয়ে বেমালুম হজম করে ফেলে, যাতে করে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড পেপসোডেন্টকে বাজারে ছাড়তে কোন বেগ পেতে না হয়।
তেমনি, ২০০৯ সালে স্কয়ারের জুইঁ নারিকেল তেল কেনার জন্য স্কয়ার গ্রুপের এমডিকে ভারতীয় একটা প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার অফার করেছিলো। এমডি সাহেব আরো টাকা চাইলেন, এরপর তা ডাবল করে ১০ মিলিয়নে আনা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে উনি আর জুঁই ব্র্যান্ডকে বেচেন না, কারণ জুইঁ ছিলো তার আদরের নাতনীর নাম। নাতনীর নামেই নারিকেল তেলটাকে তিনি ব্র্যান্ডিং করেছিলেন। তাই, নাতনীর প্রতি ভালোবাসার কারণে নাতনীর নামটি তিনি টাকার লোভে বিক্রি করে দিতে পারেননি। আমি বাজি ধরে বলতে পারি, উনি যদি বিক্রি করে দিতেন তবে জুঁইয়ের পরিণতিও হতো এরোমেটিক হালাল সাবানের মতো।
জুইঁয়ের আগে ছিলো ”হাসঁ মার্কা” নারিকেল তেল। আমি যখন প্রাইমারিতে পড়তাম, তখন আমার নানীকে দেখতাম ”হাসঁ মার্কা” নারিকেল তেল প্রতিদিন গোসলের পর মাথায় দিয়ে চুল আচড়াতে। পরবর্তীতে বাজারে প্যারাসুট আর জুইঁয়ের ধাক্কায় অক্কা পেলো হাসঁ। একটা ব্যাপারে এই সমস্ত প্রডাক্টগুলোর দারুন মিল আছে। আর তা হলো, বিভিন্ন কারণে এদের ব্র্যান্ডিং বন্ধ করার পর থেকেই সবারই সেল কমতে কমতে শূণ্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছিলো, যার ফলে কোম্পানি তাদের জনপ্রিয় পন্যগুলোকেও বাজার থেকে বিলুপ্ত করে দিতে বাধ্য হয়েছিলো।
এখন আপনারাই বলেন, সেলস > ব্র্যান্ডিং, নাকি ব্র্যান্ডিং > সেলস, নাকি উভয়ই?
সঠিক উত্তরটা শুরুতে বলেছিলাম। এত বড় পোষ্ট পড়ে হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন, তাই আবারো বলছি।
ইট ডিপেন্ডস!

Sunday, 27 June 2021

আপনার নিস সাইটের ডোমেইনটি ঠিক আছে তো?

 


[আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একটি সাধারণ ব্যাপার]
.
নিস সাইটের জন্য ডোমেইন সিলেকশনের ব্যাপারে আমি বেশ খুঁতখুঁতে। মনমতো ডোমেইন না পাওয়া পর্য়ন্ত খুঁজতেই থাকি। সেই মনমতো ব্যাপারটাও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে।
যেমন:-
  • ডোমেইনটা কি ড্রপড ডোমেইন?
  • পেনাল্টি খাওয়া ডোমেইন কিনা?
  • স্টপ ওয়ার্ড আছে কিনা?
  • স্প্যামি কিনা?
  • ওয়ার্ড দুইটার বেশি হয়ে গেলো নাতো?
  • ওয়ার্ড দুইটার সার্চ ভলিউম আছে কি?
  • কত ক্যারেক্টার হলো?
এরকম আরও বেশ কয়েকটি আছে। কিছু আছে যৌক্তিক। কিছু একদম লজিকহীন। যেমন ১৩ ক্যারেক্টারের ডোমেইন আমি চুজ করি না। এটা একদম লজিকহীন। ভুলে একবার একটা কেনা হয়ে গিয়েছিলো। আমি ঐ ডোমেইন নিয়ে কাজই করিনি।
কেন?
বললাম-ই তো যে লজিকহীন। 😛
এবার চলুন যেগুলোর পেছনে কারণ আছে সেই পয়েন্টগুলো নিয়ে জানা যাক। আপনার ডোমেইনের সাথেও পয়েন্টগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন। এক্সিসটিং প্রজেক্টে না মিললেও সামনের নতুন প্রজেক্টের জন্য কাজে লাগবে আশা করি।
ডোমেইনটা কি ড্রপড ডোমেইন?
আমি সাধারণত ড্রপড ডোমেইন নিয়ে কাজ করি না। ড্রপড ডোমেইন হলো ঐ ডোমেইনটা আগে একবার কেনা হয়েছিলো; পরে ক্রেতা রিনিউ করেননি আর। তাই ডোমেইনটা পার্কিং টাইম পেরিয়ে এখন আবার এভেইলেবল হয়ে গেছে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য। নতুনভাবে তখন যে কেউ কিনতে পারেন।
এরকম ডোমেইন চুজ না করার কারণ হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম ডোমেইনগুলো স্প্যামি হয়ে থাকে। বিশেষ করে ভালোভাবে চেক করতে না পারলে কপালে শনির দশা মেলে। তাই সবচেয়ে ভালো হলো এরকম ডোমেইন এভয়েড করা। আমি তা-ই করি।
.
পেনাল্টি খাওয়া ডোমেইন কিনা?
এই ব্যাপারটা বুঝতে পারা খুবই কষ্টকর। একদম এক্সপার্ট লেভেলের না হলে সেটা খুঁজে বের করা অনেক কঠিন। এই ক্ষেত্রে সহজ তরিকা হলো ড্রপড ডোমেইন হলেই সেটাকে নিয়ে আর ঘাটাঘাটি না করে বাদ দিয়ে দেয়া। আর যদি সেটা বুঝতে চান, তাহলে হাসিবুল ভাইয়ের আর্টিক্যালটা দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও ডোমেইন হিস্টোরি চেক করার একটা আর্টিক্যালও এই লেখার শেষে যোগ করবো। পড়ে নিতে পারেন। আমার নিজের একটা ভিডিও আছে। গ্রুপ রুলসের সাথে যায় না বলে সেটা এখানে দেয়া গেলো না 😉 ।
.
স্টপ ওয়ার্ড আছে কিনা?
এটা আমার জন্য এলার্জি। তবে অনেক এক্সপার্ট-ই এটা মানেন না। এমনকি এই গ্রুপের একজন সেরা এক্সপার্টের সাইটেও দেখেছি ডোমেইনে স্টপওয়ার্ড আছে। তবে তিনি সেটা এক্সপায়ার্ড ডোমেইন কিনেছেন। সেইজন্য হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো- স্টপ ওয়ার্ড কোনগুলো? যেমন- The। ডোমেইনের উদাহরণ: TheWirecutter.com (বর্তমানে NYtimes)। এরকম আরও বেশ কিছু ওয়ার্ড আছে। যেমন: to, in, with, of, is, at, which, and, on.... এগুলোকে বলে স্টপ ওয়ার্ড। কোনো ইউআরএলে এরকম স্টপ ওয়ার্ড থাকলে গুগল বট সেরকম ইউআরএলকে ”অনেক সময়” রিড করতে পারে ন। যদিও এ ব্যাপারে ১০০% কোনো তথ্য কোথাও লিপিবদ্ধ নেই।
লিপিবদ্ধ নেই নির্দিষ্ট করে স্টপ ওয়ার্ডের লিস্টও। ফলে যেটা এক জায়গায় স্টপ ওয়ার্ড সেটাই অন্যত্র তা না-ও হতে পারে। তবে মজার ব্যাপার হলো- গুগলের চোখে best শব্দটাও কখনও কখনও স্টপ ওয়ার্ড (সোর্স: সাউটমীলাউড)।
সাম্প্রতিক সময়ে গুগল আর্টিক্যাল ইনডেক্স না করার পেছনে (এনএলপি সম্পর্কিত) এই স্টপ ওয়ার্ড সম্পর্কিত কিনা তা ভাববার বিষয়। টেকনিক্যাল এসইওতে এক্সপার্টরা এই বিষয়ে আরও ভালো বলতে পারবেন। সম্ভবত Aouwal ভাই এই ব্যাপারে সঠিক কোনো গাইডলাইন দিতে পারবেন।
.
স্প্যামি কিনা?
ডোমেইনের স্প্যাম স্কোর চেক করার নির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি গুগলের কাছে নেই। থার্ডপার্টি (যেমন ময) ইউজ করে এটা জানা যায়। স্প্যাম স্কোরটা আসলে নির্ধারণ হয় ডোমেইনটা কতবার ড্রপ হয়েছে এবং কতরকম ক্যাটগারিতে পুনর্জন্ম হয়েছে + ডোমেইনটার ব্যাকলিংক কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে।
এই বিষয়টাও এক্সপার্ট ছাড়া নতুন মার্কেটারদের বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা। আমি নিজেও সমস্যা বোধ করি। যে কারণে ড্রপড ডোমেইন হলেই আর সামনে আগাই না। সেটাকে সেখানেই ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে মুভ করি।
.
ওয়ার্ড দুইটার বেশি হয়ে গেলো নাতো?
এটাও সুনির্দিষ্ট সঠিক কোনো কারণ না। আমি নিজে সাধারণত ডোমেইন দুই ওয়ার্ডের বেশিতে যাই না। দুই ওয়ার্ডের ডোমেইন শ্রুতিমধুর, সুন্দর, ব্রান্ডেবল এবং মনে রাখার মতো। জাস্ট এই কারণেই আমি দুই ওয়ার্ডের ডোমেইন পছন্দ করি। এছাড়া এসইও বা টেকনিক্যাল কোনো কারণ নেই। আমার নিজের আরেকটা কারণ হলো: ডোমেইনের নাম কোথাও লিখতে হলে কম পরিশ্রম করা লোগে 😁 ।
.
কত ক্যারেক্টার হলো?
আমার আরেকটা এলার্জি হচ্ছে ডোমেইনের ক্যারেক্টার নিয়ে। বিষয়টা প্রথম মাথায় আসে বেশ কয়েক বছর আগে। আপনি কি জানেন ট্যুইটার ইউজার নেম পনেরো ক্যারেক্টারের বেশি নেয় না? একবার ইউজার নেম সেট করতে গিয়ে এই সমস্যাটা পাই। তারপর থেকেই ডোমেইন কিনতে গেলে মাথায় এই ব্যাপারটা চলে আসে। চেষ্টা করি যতোটা সম্ভব শর্ট করতে। আমার বেশিরভাগ ডোমেইন ৯ এবং ১০ ক্যারেক্টারের। দুয়েকটা একটু এদিক-ওদিক আছে। তবে পনেরোর বেশি কোনোটা নয়।
.
ওয়ার্ড দুইটার সার্চ ভলিউম আছে কি?
ডোমেইন আমি দুই ওয়ার্ডের কিনি। আগেই বলেছি। তো ওয়ার্ড দুইটা চুজ হওয়ার পর প্রথমেই যে কাজটা করি সেটা হচ্ছে- সেটার সার্চ ভলিউম আছে কিনা তা দেখি। আমার কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। সার্চ ভলিউম আছে মানেই হচ্ছে কেউ না কেউ সার্চ করছে। আর সার্চ করার মানেই হলো ন্যুনতম একটা সুযোগ থাকে আমার ডোমেইনটার ইমপ্রেশন পাওয়ার; যদি তেমনভাবে ব্র্যান্ডিং করা যায়। আর ইমপ্রেশন পাওয়া মানেই তো... ❤ এটা আমার কাছে একটা বড় প্লাস পয়েন্ট মনে হয়।
তার মানে কিন্তু এই নয় যে, সার্চ ভলিউম ছাড়া আমি ডোমেইন কিনি না বা কাজ করি না। আছে, তেমন সাইটও আমার আছে। তবে কম। এবং ভবিষ্যতের প্রজেক্টগুলো যেন এসভি ছাড়া না হয় তা নিশ্চিত করছি।
.
ব্যতিক্রম উদাহরণ নয়
আমি জানি ব্যতিক্রম উদাহরণ নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম কাজ করতে ইচ্ছে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এরকম একটা ব্যতিক্রম কাজ করেছি।
.
কি কি ব্যতিক্রম কাজ করলাম?
  • ডোমেইন একটা ৪ ওয়ার্ডের কিনেছি
  • সেটার ক্যারেক্টার ২৬টা, ইয়েস! ঠিকই দেখতে পাচ্ছেন 😃
  • সাইটে ১৭টা আর্টিকক্যাল দিয়েছি একই দিনে (এমনটা করি না)
  • এবং ভবিষ্যতে আর আর্টিক্যাল দেয়া হবে না (এমনটাও করি না)
  • ১২টা মানি এবং ৫টা ইনফো আর্টিক্যাল (রেশিও ঠিক রাখিনি)
  • টোটাল ওয়ার্ড ৪০ হাজার ওয়ার্ড প্লাস/মাইনাস (বর্তমান সময়ের জন খুব কম)
.
তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- এই লম্বা ৪ ওয়ার্ড বা ২৬ ক্যারেক্টার ডোমেইনের সার্চ ভলিউম ১২কে+। শুধু এই একটা প্লাস পয়েন্ট। এছাড়া আর কিছু আমার নিজস্ব মেট্রিক্সের সাথে মিলে না।
আর্টিক্যাল পাবলিশ করা হয়েছে আজ ১২ দিন। প্রথম ১০ দিনের GWMT এর অবস্থা হলো এই: https://prnt.sc/171rgvc
 (আগ্রহীরা দেখে আসতে পারেন।)।
এই সাইট নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
সত্যি কথা বলতে সাইটটা বানিয়ে মজা পেয়েছি। কীওয়ার্ড রিসার্চ করা ছিলো আগের। ডোমেইন আর হোস্টিং কেনা হয়েছে এই মাসের প্রথম সপ্তাহে। তারপর টিম নিয়ে আর্টিক্যাল লেখানো এবং কনটেন্ট স্ট্রাকচার ডিজাইন করে পাবলিশ এবং অনপেজ কমপ্লিট করেছি ১৪ তারিখ। ঐদিনই গুগলে সাবমিট করা হয়েছে।
.
আপাতত সাইটটা ফেলে রাখা হবে। আর কোনো আর্টিক্যাল নয়। কোনো ব্যাকলিংক নয়। কোনোরকম আর কাজ নয়। ফেলে রাখা মানে ফেলে রাখা-ই। এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট। শুধু মাঝে মাঝে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে একটা করে ঢুঁ মারবো- তাও শুধুমাত্র পিনটারেস্টে। নিসটা পিনটারেস্টের উপযোগি। আর আর্টিক্যাল আপ-টু-ডেট রাখবো।
.
উপসংহার
আমার পছন্দের ডোমেইন সিলেকশন পদ্ধতি এবং ব্যতিক্রম উদাহরণ এইজন্য দিলাম যে, যেন আপনাদের এটা বুঝাতে পারি যে, কাউকে দেখে নয়, কারও কাজ শিখে নিজের মতো করে সেটা এপ্লাই করার চেষ্টা করা ভালো।
ভালো ভালো কথা শুনে কাজে নেমে পড়বেন না (ছবিতে বাবা-মা যতো আদর করে বলেছে তার আড়ালে কী আছে বুঝতে পারছেন তো? 😉 ), ভাই। কথাগুলো আগে বুঝতে যদি শিখতে পারেন, তবেই ভালো কিছু করা সম্ভব।
ফর মোর:
সবাই ভালো থাকুন।
হ্যাপি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং!